হযরত নূহ (আ.): এক মহান নবী ও তাঁর জীবনকাহিনী

হযরত নূহ (আ.): এক মহান নবী ও তাঁর জীবনকাহিনী

হযরত নূহ (আ.) ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকারী মহান নবী। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতিকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করতে গিয়েছিলেন এবং আল্লাহর বিধান প্রচার করেছিলেন। হযরত নূহ (আ.) এর জীবন কাহিনী কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়, এবং তাঁর জীবন থেকে মহান শিক্ষার পাঠ গ্রহণ করা যায়। তিনি ছিলেন প্রথম কিতাবপ্রাপ্ত নবী এবং তাঁর মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

১. হযরত নূহ (আ.) এর উত্থান

হযরত নূহ (আ.) এর আগমন মহান আল্লাহর এক বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। তাঁকে পাঠানো হয়েছিল যাতে তিনি মানবজাতিকে আল্লাহর একত্বের প্রতি আহ্বান করতে পারেন। সেই সময় মানুষের মধ্যে শিরক এবং অবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল। তাই আল্লাহ তাঁকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পথ প্রদর্শনের জন্য নবী হিসেবে মনোনীত করেন।

২. নূহ (আ.) এর জাতি ও পরিবেশ

হযরত নূহ (আ.) এর জীবনকালে পৃথিবী ছিল দুর্নীতি ও পাপাচারে পূর্ণ। মানুষের মধ্যে শিরক (অন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস) ও খারাপ আচরণ ছিল। তারা বহু দেবতার পুজো করত এবং আল্লাহর আদেশ উপেক্ষা করত। তাঁদের মাঝে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা একেবারে বিরল ছিল।

৩. আল্লাহর আহ্বান ও নূহ (আ.) এর মিশন

হযরত নূহ (আ.) যখন নবী হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন আল্লাহ তাঁকে জনসাধারণকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করতে নির্দেশ দেন। তিনি ৯৫০ বছর মানুষের মাঝে আল্লাহর একত্ব ও তাঁর আদেশ প্রচার করেন। তবে অধিকাংশ মানুষ তাঁর আহ্বানকে অগ্রাহ্য করেছিল এবং তাকে উপহাস করত। নূহ (আ.) কখনোই হতাশ হননি, বরং তিনি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তাঁর বার্তা অব্যাহত রাখেন।

৪. নূহের (আ.) মহাপ্লাবন

হযরত নূহ (আ.) এর প্রচারিত বার্তা ছিল যে, যদি মানুষ আল্লাহর একত্ব বিশ্বাস না করে এবং নৈতিকতার পথ অনুসরণ না করে, তবে আল্লাহ তাঁদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। এক সময় আল্লাহ নূহ (আ.) কে নির্দেশ দেন, তাঁর জাতিকে সতর্ক করার পরেও যদি তারা না শোনে, তাহলে এক ভয়ংকর প্লাবন (বন্যা) পাঠানো হবে। আল্লাহ নূহ (আ.) কে একটি বিশাল নৌকা নির্মাণ করতে বলেন, যাতে তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা নিরাপদে থাকতে পারেন। নূহ (আ.) ও তাঁর বিশ্বাসী অনুসারীরা নৌকায় উঠে, মহান আল্লাহর সাহায্যপ্রার্থনা করেন। পরে সেই মহাপ্লাবন আসে, যা পৃথিবীকে প্লাবিত করে ফেলে এবং শুধুমাত্র নৌকায় থাকা লোকজনই বাঁচতে সক্ষম হয়। এই মহাপ্লাবনের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর সাজার কথা বাস্তবায়ন করেন।

৫. হযরত নূহ (আ.) এর শিক্ষা

হযরত নূহ (আ.) এর জীবন থেকে অনেক মূল্যবান শিক্ষা পাওয়া যায়। তাঁর ধৈর্য, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, এবং মানুষের কল্যাণে নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের জন্য একটি মহান উদাহরণ। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে শিরক ও অন্যায় কাজ থেকে সতর্ক করেছিলেন এবং ঈমানদার হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।

৫.১ আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাস

হযরত নূহ (আ.) তাঁর জাতিকে সঠিক বিশ্বাসের দিকে আহ্বান করেছিলেন—অর্থাৎ, আল্লাহর একত্ব ও পূর্ণ আনুগত্য। তিনি জানতেন যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্তা উপাস্য নয় এবং তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করাই একমাত্র সত্য পথ।

৫.২ ধৈর্য ও Perseverance

নূহ (আ.) এর জীবন ছিল এক নীরব সংগ্রামের কাহিনী। দীর্ঘ ৯৫০ বছর তিনি তাঁর জাতিকে আল্লাহর পথে আনতে চেষ্টা করেছেন, যদিও তাদের অধিকাংশই ছিল অবিশ্বাসী। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের শেখান যে, ইসলামের পথে অবিচল থাকা এবং ধৈর্যধারণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

৫.৩ সমাজের কল্যাণে নিবেদিত

নূহ (আ.) শুধু ব্যক্তিগত নৈতিকতা নয়, বরং সমাজের কল্যাণে কাজ করেছিলেন। তিনি জনগণের মধ্যে সত্য ও ন্যায়ের প্রচার করতেন, তাঁদেরকে শিরক ও অবিচারের পথ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সচেতন করতেন। তাঁর কাজ ছিল একজন আদর্শ সমাজ সৃষ্টির জন্য।

৬. হযরত নূহ (আ.) এর মৃত্যু

হযরত নূহ (আ.) এর মৃত্যুর পর তাঁর জাতি বেশ কিছু বছর আল্লাহর পথে চলেছিল। তবে কিছু পরেই তারা আবার অবিশ্বাসের দিকে ফিরে যায়। তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর শিক্ষা ও বার্তা মানুষের মনে অম্লান হয়ে থাকে, এবং তিনি ইসলামের ইতিহাসে এক মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

৭. উপসংহার

হযরত নূহ (আ.) ইসলামের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। তাঁর জীবন ও মিশন আমাদের শেখায় যে, সত্যের পথে থাকতে হলে সংগ্রাম করতে হয় এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে হয়। তাঁর ধৈর্য, ত্যাগ, এবং আত্মবিশ্বাস আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমাদেরও উচিত, হযরত নূহ (আ.) এর মতো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ন্যায় ও সত্যের পথে চলা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *