অটোমান সাম্রাজ্য (তুর্কি ভাষায়: عثمانی سلطنت; ইংরেজি: Ottoman Empire) বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ ও প্রভাবশালী সাম্রাজ্য। এটি ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে আনাতোলিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বছর ধরে স্থায়ী ছিল। এই সাম্রাজ্য ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার এক বিশাল অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ছিল।
প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক যুগ
অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওসমান প্রথম (Osman I)। তিনি আনাতোলিয়ায় সেলজুক সাম্রাজ্যের পতনের পর একটি ছোট্ট সামরিক শক্তি হিসেবে অটোমানদের উত্থান ঘটান। ধীরে ধীরে এই ছোট্ট আমিরাত একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল দখল করার মাধ্যমে সম্রাট মুহাম্মদ ফাতিহ (Mehmed II) অটোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব ও পরিধি বহুগুণ বৃদ্ধি করেন।
সাম্রাজ্যের সোনালি যুগ
১৫ ও ১৬ শতক ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের সোনালি যুগ। এই সময় সম্রাট সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট (Suleiman the Magnificent) সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছান। তার শাসনামলে অটোমান সাম্রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বিশাল অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে। এই সময়ে সামরিক, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করে।
পতন ও অবসান
১৭ শতকের পর থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা ঘটে। বিভিন্ন সামরিক পরাজয়, প্রশাসনিক দুর্বলতা, এবং ইউরোপীয় জাতিগুলোর ক্রমবর্ধমান আধিপত্য সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার কারণ হয়। ১৯১৪-১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্য পরাজিত হয়। এর পর ১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অটোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার
অটোমান সাম্রাজ্য শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক শক্তির দিক থেকেই নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর শিল্প, স্থাপত্য, সাহিত্য এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চা বহু যুগ ধরে মানুষকে প্রভাবিত করেছে। আধুনিক তুরস্ক, আরব দেশসমূহ এবং বলকান অঞ্চলের ইতিহাসে অটোমান সাম্রাজ্যের গভীর প্রভাব বিদ্যমান।
অটোমান সাম্রাজ্য ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়, যা মানব সভ্যতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।