হযরত ইয়ারদ (আ.) – মানবজাতির ধারাবাহিক নবুওয়াতের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র

হযরত ইয়ারদ (আ.) – মানবজাতির ধারাবাহিক নবুওয়াতের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র

হযরত ইয়ারদ (আ.), যিনি ইসলামি ঐতিহ্যে মানবজাতির ধারাবাহিক বংশধারার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে বিবেচিত, ছিলেন হযরত মাহলাইল (আ.)-এর পুত্র এবং হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর পিতা। তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ড মানবজাতির তাওহিদ, সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা এবং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ।


জন্ম ও পরিবার

হযরত ইয়ারদ (আ.)-এর জন্ম এমন এক সময়ে হয়, যখন মানবজাতি তাওহিদের পথে অগ্রসর ছিল। তিনি তাঁর পিতা হযরত মাহলাইল (আ.)-এর কাছে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করেন। এই শিক্ষার ভিত্তিতে ইয়ারদ (আ.) মানুষকে সৎ পথে পরিচালিত করেন এবং আল্লাহর আদেশ মানার জন্য উৎসাহিত করেন।


সমাজ ও সময়কাল

হযরত ইয়ারদ (আ.)-এর সময়কাল ছিল এক পরিবর্তনের যুগ। অনেক মানুষ আল্লাহর পথে থাকলেও কিছু মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতিতে তিনি মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করেন।


তাঁর ভূমিকা ও অবদান

  1. তাওহিদের প্রচার
    হযরত ইয়ারদ (আ.)-এর মূল দায়িত্ব ছিল মানুষকে তাওহিদের পথে ধরে রাখা। তিনি মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করতে এবং শয়তানের ধোঁকায় না পড়তে উৎসাহিত করেন।
  2. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
    ইয়ারদ (আ.) সমাজে ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দিকনির্দেশনায় সমাজে নৈতিকতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রসার ঘটে।
  3. পরিবারের প্রতি দায়িত্ব
    হযরত ইয়ারদ (আ.) নিজের পরিবারে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছিলেন। তাঁর পুত্র হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর ওপর তাঁর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
  4. শয়তানের বিরোধিতা
    ইয়ারদ (আ.) মানুষকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচানোর জন্য সচেষ্ট ছিলেন। তিনি তাঁদের মনে করিয়ে দিতেন যে শয়তানের প্ররোচনা থেকে দূরে থাকা জরুরি।

পরবর্তী প্রজন্মে প্রভাব

হযরত ইয়ারদ (আ.)-এর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তাঁর পুত্র হযরত ইদ্রিস (আ.)। ইয়ারদ (আ.) তাঁর পুত্রকে তাওহিদ এবং ধর্মীয় দায়িত্বের শিক্ষা দেন, যা পরবর্তীতে হযরত ইদ্রিস (আ.) নবুওয়াত প্রাপ্তির জন্য প্রস্তুত করে।


ইন্তেকাল ও স্মৃতি

ইসলামী ঐতিহ্যে উল্লেখ আছে যে, হযরত ইয়ারদ (আ.) দীর্ঘজীবন লাভ করেন। তিনি ৯৬২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁকে যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়। তাঁর স্মৃতি তাঁর বংশধারায় নবীদের মাধ্যমে চিরজীবী হয়ে আছে।


তাঁর জীবনের শিক্ষা

  1. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য: হযরত ইয়ারদ (আ.) তাঁর জীবন আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্যের মাধ্যমে অতিবাহিত করেন।
  2. সৎ পথে পরিচালিত করা: সমাজ ও পরিবারকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য তিনি আজীবন কাজ করেছেন।
  3. পরিবারে ধর্মীয় শিক্ষা: তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাওহিদ এবং নৈতিক শিক্ষার বীজ বপন করেন।

উপসংহার

হযরত ইয়ারদ (আ.) ছিলেন মানবজাতির ধারাবাহিক নবুওয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ড আমাদের শেখায়, কীভাবে আল্লাহর পথে অবিচল থেকে সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। তাঁর শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা মানবজাতির জন্য চিরকালীন অনুপ্রেরণা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *