হযরত শিস (আ.) – মানবজাতির দ্বিতীয় নবী

হযরত শিস (আ.) – মানবজাতির দ্বিতীয় নবী

হযরত শিস (আ.) ইসলামী ঐতিহ্যে মানবজাতির দ্বিতীয় নবী হিসেবে পরিচিত। তিনি হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। শিস (আ.)-এর নাম আরবি ভাষায় এসেছে, যার অর্থ “আল্লাহর পক্ষ থেকে দান”। এটি বোঝায় যে তিনি আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর জন্য একটি বিশেষ দান ছিলেন, বিশেষত হাবিলের মৃত্যুর পর।

জন্ম ও শৈশব

ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, হযরত শিস (আ.)-এর জন্ম হাবিলের মৃত্যুর পরে হয়। আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) শিস (আ.)-এর প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন। তাঁরা তাঁর মধ্যে মহানগুণের প্রকাশ দেখতে পেয়েছিলেন। শিস (আ.) ছিলেন প্রজ্ঞাবান, ধার্মিক এবং জ্ঞানী।

নবুওয়াত প্রাপ্তি

হযরত আদম (আ.)-এর মৃত্যুর পর আল্লাহ তায়ালা শিস (আ.)-কে নবুওয়াত দান করেন। তিনি মানুষকে তাওহিদ বা আল্লাহর একত্বের পথে পরিচালিত করেন এবং তাঁদেরকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করেন।

হযরত শিস (আ.)-এর ভূমিকা

  1. তাওহিদের প্রচার: হযরত শিস (আ.) মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য আহ্বান জানান। তিনি তাঁদের মনে করিয়ে দেন যে আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা এবং তাঁরই উপাসনা করা উচিত।
  2. আইন ও বিধি প্রবর্তন: আল্লাহ তাঁকে বিশেষ নির্দেশনা দেন যাতে মানুষ সঠিক পথে চলতে পারে। তিনি মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন।
  3. শয়তানের বিরোধিতা: আদম (আ.)-এর সময় থেকেই শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। শিস (আ.) মানুষের কাছে শয়তানের কৌশল সম্পর্কে সতর্কতা প্রদান করেন এবং তাঁদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
  4. জ্ঞান বিতরণ: ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, হযরত শিস (আ.)-কে পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কলম ও লিখনশৈলী শেখানো হয়। তিনি মানুষের মধ্যে জ্ঞান এবং আল্লাহর বাণী প্রচার করেন।

শিস (আ.)-এর বংশধারা

হযরত শিস (আ.)-এর মাধ্যমে মানবজাতি আরও বিস্তার লাভ করে। তাঁর বংশধারা থেকেই পরে হযরত নূহ (আ.)-এর আবির্ভাব হয়। হযরত নূহ (আ.)-কে মানবজাতির “দ্বিতীয় পিতা” বলা হয় কারণ মহাপ্লাবনের পরে তাঁরই বংশধারা টিকে থাকে।

ইন্তেকাল

হযরত শিস (আ.) দীর্ঘজীবন লাভ করেন। ইসলামী ঐতিহ্যে বর্ণিত হয় যে তিনি ৯১২ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে সম্মানের সঙ্গে দাফন করা হয়।

শিক্ষণীয় দিক

হযরত শিস (আ.)-এর জীবন থেকে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি:

  1. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য: তিনি আল্লাহর নির্দেশ পালনে সদা সচেষ্ট ছিলেন।
  2. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: সমাজে শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা একটি নবীর মূল দায়িত্ব।
  3. জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব: শিস (আ.) জ্ঞান ও শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রেখেছিলেন, যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।

উপসংহার

হযরত শিস (আ.) ছিলেন আদম (আ.)-এর বংশধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি তাওহিদ প্রতিষ্ঠা, জ্ঞানচর্চা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর জীবনের কাহিনি আমাদের আল্লাহর পথে অবিচল থাকার এবং জ্ঞানের আলো ছড়ানোর অনুপ্রেরণা দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *