হযরত ইসহাক (আ.) – বিশদ বিবরণ

হযরত ইসহাক (আ.) ছিলেন ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ নবী, যিনি হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর পুত্র এবং হযরত ইসমাইল (আ.)-এর ছোট ভাই। তাঁর জীবনী আল্লাহর কুদরত, নবুওতের দায়িত্ব, এবং মানুষের প্রতি দিকনির্দেশনার এক মহৎ উদাহরণ।


জন্মের অলৌকিক ঘটনা

হযরত ইসহাক (আ.)-এর জন্ম হয় হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত সারাহ (আ.)-এর পরিবারে। সারাহ (আ.) ছিলেন দীর্ঘকাল নিঃসন্তান, এবং বয়সকালে তাঁদের পুত্রসন্তান জন্ম নেয়।

আল্লাহর সুসংবাদ:
কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, ফেরেশতারা ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে এসে ইসহাক (আ.)-এর জন্মের সুসংবাদ প্রদান করেন:

“তারা বলল, তুমি ভয় করো না। আমি তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।”
(সূরা আদ-ধারিয়াত: ২৮)

সারাহ (আ.)-এর বিস্ময়:
সারাহ (আ.) বিস্ময়ে বললেন:
“হায়! আমি কি সন্তান প্রসব করব, যখন আমি বৃদ্ধা এবং আমার স্বামীও বৃদ্ধ?”
(সূরা হুদ: ৭২)

ফেরেশতাদের উত্তর:
তাঁরা বললেন:
“এটি তোমার রবের আদেশ। তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।”
(সূরা হুদ: ৭৩)


তাঁর নাম ও অর্থ

ইসহাক নামটি ইব্রাহিমি ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ “তিনি হাসবেন।” এটি সারাহ (আ.)-এর হাসি থেকে প্রেরণা লাভ করে রাখা হয়।


তাঁর নবুওতের দায়িত্ব

হযরত ইসহাক (আ.) নবী হিসেবে ফিলিস্তিন অঞ্চলে আল্লাহর একত্ববাদের প্রচার করেন। তিনি ছিলেন তাঁর পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী। তাঁর নবুওতের মূল শিক্ষা ছিল:

  1. তাওহিদ:
    মানুষকে এক আল্লাহর উপাসনা করতে বলা।
  2. ন্যায় ও সততা:
    সমাজে ন্যায়পরায়ণতা ও সততার প্রসার ঘটানো।
  3. শিরক পরিহার:
    মানুষকে মূর্তিপূজা এবং শিরক থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো।

কুরআনে বর্ণনা:
হযরত ইসহাক (আ.)-কে আল্লাহ একটি ধন্য পরিবার এবং বরকতময় প্রজন্মের উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
“আর আমি তাকে (ইবরাহিমকে) ইসহাক ও ইয়াকুব দান করলাম এবং প্রত্যেককে আমি নবী বানিয়েছি।”
(সূরা মারইয়াম: ৪৯)


পরিবার ও উত্তরাধিকার

হযরত ইসহাক (আ.)-এর স্ত্রী ছিলেন রেবেকা (রিফকা)। তাঁদের দুই পুত্রসন্তান জন্ম নেয়:

  1. ঈস (Esau): বংশগত দিক থেকে প্রধানত ইহুদিদের পূর্বপুরুষ।
  2. হযরত ইয়াকুব (আ.): নবী হিসেবে মনোনীত হন এবং পরবর্তীতে তাঁর বংশধারা থেকে বহু নবী জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা-পুত্রের সম্পর্ক

হযরত ইসহাক (আ.) পিতার কাছ থেকে নবুওতের দায়িত্ব ও আল্লাহর পথে চলার শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর পুত্র হযরত ইয়াকুব (আ.)-কেও নবুওতের পথ দেখান।


জীবনের প্রধান ঘটনা

  1. বরকতের নবী:
    হযরত ইসহাক (আ.)-কে কুরআনে বরকতময় নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে, তাঁর পিতা ইবরাহিম (আ.), এবং তাঁর পুত্র ইয়াকুব (আ.)-এর মধ্যে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেন।
  2. মানবজাতির জন্য উদাহরণ:
    তাঁর দায়িত্ব ছিল মানুষকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করা এবং শিরক থেকে দূরে রাখা।
  3. ফিলিস্তিনে দায়িত্ব পালন:
    ইসহাক (আ.) ফিলিস্তিনের হেব্রন অঞ্চলে বসবাস করতেন এবং সেখান থেকেই আল্লাহর বার্তা প্রচার করতেন।

তাঁর চরিত্র ও গুণাবলী

  1. ধৈর্যশীল:
    তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।
  2. আল্লাহভীরু:
    তিনি সর্বদা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল ছিলেন।
  3. পরিবারপ্রেমী:
    তাঁর পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ ছিল উদাহরণযোগ্য।

ইন্তেকাল ও সমাধি

হযরত ইসহাক (আ.) দীর্ঘ ১৮০ বছর জীবিত ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনের হেব্রন এলাকায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে তাঁর পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর পাশে সমাহিত করা হয়।


তাঁর জীবনের শিক্ষা

হযরত ইসহাক (আ.)-এর জীবন আমাদের জন্য শিক্ষা:

  1. আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস রাখা।
  2. তাওহিদের প্রচার করা এবং শিরক পরিহার করা।
  3. ধৈর্য ও ন্যায়পরায়ণতার পথ অবলম্বন করা।
  4. পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা।

উপসংহার

হযরত ইসহাক (আ.)-এর জীবন আল্লাহর কুদরত ও মানুষের জন্য হেদায়েতের এক মহৎ উদাহরণ। তিনি পিতার উত্তরাধিকার হিসেবে নবুওতের মহান দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর পরবর্তী প্রজন্মে নবীদের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেন। আল্লাহর প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার বার্তা যুগে যুগে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *